গ্রাম হোক বা শহর সব জায়গার মানুষ মোমবাতির ব্যবহার করে। মোমবাতি আমাদের সবার কাছে একটি অতি পরিচিত নাম। অব্যাহত লোডশেডিংয়ের যাঁতাকলে, বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে, জন্মদিন সহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে মোমবাতির কদর অনেক। শুধু গৃহবাসী নয়, দোকানি বা ব্যবসায়ীদের কাছেও এটি খুব দরকারি ও প্রিয় একটি পণ্য। এমনকি শো-পিস হিসেবেও নানা রঙ ও আকৃতির মোমবাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। মোমবাতি তৈরির কলাকৌশল আমরা অনেকেই জানি না। জানলে হয়তো আমাদের মতো বিপুল বেকারের এদেশে মোমবাতি শুধু একটি বাতি না হয়ে আত্নকর্মসংস্হানের একটি মাধ্যমে হতে পারতো। মোমবাতি তৈরি ব্যবসায় অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে বেশি আয় করা যায় কাজটি সহজেই শেখা যায়।
কাজটি পরিবারের সদস্যরা মিলেই অল্প টাকা দিয়েই শুরু করা যায় । বেকার নারী বা পুরুষ নিজের কর্মসংস্থানের জন্য মোমবাতি তৈরির ব্যবসা শুরু করতে পারেন, এখানে মোমবাতি তৈরির কলাকৌশল, উপকরণ, কাঁচামাল, বাজারজাত করণ, আয়-ব্যয় এর কিছু টিপস নিচে তুলে ধরা হল-
সবার আগে প্রশিক্ষণ
মোমবাতি তৈরির কাজটা খুব কঠিন নয়। তবে কারিগরি জ্ঞান না থাকলে তৈরি করা যাবে না। এর জন্য নিতে হবে প্রশিক্ষণ। সবচেয়ে ভালো হয় মোমবাতি তৈরির কোনো প্রতিষ্ঠানে একজন কারিগরের অধীনে ১/২ দিন কাজ করতে পারলে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও মোমবাতি তৈরির কাজ শেখা যায়। যাদের কাছে ডাইচ ও অন্যান্য উপকরণ কিনবেন তাদের কাছেও প্রশিক্ষন নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। একেবারে কিছু না জেনে কোন কিছুই করা ঠিক হবেনা।
মোমবাতি কিভাবে তৈরি করতে হয়, তার কিছু ধারনা নিচে দেয়া হল-
মোমবাতি দুই ধরনের হয়ে থাকে- ১। আলোর জন্য ব্যবহার্য সাধারণ মোমবাতি, ২। ঘর-সাজানো, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহার্য রঙ্গিন কারুমোম।
মোমবাতি বানাতে কাঁচামাল এবং স্থায়ী উপকরণ ও যন্ত্রপাতি
কাঁচামালঃ
কাঁচামালের নাম এগুলো কোথায় পাওয়া যাবে :-
১. সাদা মোম বা প্যারাফিন
২. স্টিয়ারিক অ্যাসিড
৩. সুতি সুতা
৪. প্রয়োজনীয় রং
৫. পেট্রোলিয়াম জেলি বা সাধারণ তেল,
৬. প্যাকেট কাগজ কিনে নিজেরা তৈরি করে নেওয়া যায়
৭. লেবেল (যদি লাগে) প্রেস থেকে ছাপাতে হবে ।
৮. ছাঁচের জন্য মোটা কাগজ বা মোটা কাগজের বাক্স।
৯. আঠা
উপরের মালামাল গুলো স্থানীয় কেমিক্যালস এর দোকানে, হার্ডওয়্যার, মুদি, ব্লক-বুটিক এর দোকানে পাওয়া যাবে। তবে যেখান থেকে মোমের মূল কাঁচামাল (সাদা মোম বা প্যারাফিন এবং স্টিয়ারিক অ্যাসিড) অথবা ডাইস বা মেশিন কিনবেন তারা এ ব্যাপারে ভালো পরামর্শ দিতে পারে। তারা এ ব্যাপারে অনেক সহজোগিতা করবেন। তবে মনে রাখবেন যেকোন জিনিস তৈরি করার জন্য দরকারি কাঁচামাল যোগাড় করা ও কেনার উপর ব্যবসার লাভ-ক্ষতি নির্ভর করে।
স্থায়ী উপকরণ ও যন্ত্রপাতিঃ
মোমবাতির ডাইস/ছাচ, কড়াই, পাত্র, ছুরি, কাঁচি, চামচ, মগ, বালতি, তুলি, স্টোভ ইত্যাদি।
এখন আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই এসব কাঁচামাল এবং উপকরণ আসলে কি জিনিস:
মোমবাতির ডাইস/ছাচঃ মোম তৈরির জন্য প্রথমেই লাগবে ডাইস বা ছাঁচ। বিশেষ এ ডাইসের ভেতরে মোমবাতি আকৃতির কতগুলো খাঁজ থাকে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের রেডিমেড ছাঁচ পাওয়া যায় যাদের দাম অনেক বেশী। তবে ছাঁচ নিজেরাও তৈরি করে নিতে পারেন। যেমন: টিন, প্লাস্টিক বা লোহা দিয়ে লেদ মেশিনে নিজেদের পছন্দমত তৈরি করা যায়।
সাদা মোম বা প্যারাফিনঃ এটি এক ধরনের খনিজ মোম যা খনি থেকে পাওয়া যায়। সাদা রঙের মোমের কোনো গন্ধ ও স্বাদ নেই ও তা অল্প তাপে সহজেই গলে যায়। তাপে প্যারাফিন গলে যায়, তবে যেটি ৫৮° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দ্রবিভূত হয় তাই মোমবাতি তৈরীর জন্য সবচেয়ে উপযোগী। প্যারাফিন শক্ত, কম শক্ত ও নরম পাওয়া যায়, মোমবাতি তৈরি করার জন্য শক্ত প্যারাফিন ভালো।
স্টিয়ারিক অ্যাসিডঃ স্টিয়ারিক অ্যাসিড পশুর চর্বি বা তৈল থেকে অথবা পাম অয়েল থেকে তৈরি এক ধরনের অ্যাসিড যা দেখতে কঠিন মোমের মত। এটিও অল্প তাপে গলে যায়। প্যারাফিনের সাথে স্টিয়ারিক অ্যাসিড পরিমাণমতো মেশালে তৈরি মোম উন্নতমানের হয়। এর ফলে মোম বাতি শক্ত হয়, মোম তাড়াতাড়ি গলে যায় না ও মোমবাতি বেশি সময় ধরে জ্বলে। তাই প্যারাফিন ও স্টিয়ারিক অ্যাসিড পরিমাণমতো মেশাতে হবে। কারণ তা কম বা বেশি হলে মোমবাতির মান ভালো হবে না।
সলতেঃ মোমবাতি তৈরির জন্য ঢিলাভাবে পাকানো কার্পাস সুতা প্রয়োজন। মোমের সাইজ অনুযায়ী এই সুতা চিকন ও মোটা হবে। মোটা ব্যাসের মোমের জন্য মোটা পলতের সুতা এবং চিকন ব্যাসের মোমের জন্য চিকন পরতের সুতা নিতে হবে। সলতের সুতা অবশ্যই সুতি হতে হবে। আর গলা মোমে সুতা চুবিয়ে মোমের প্রলেপ দিতে হয়। সলতের সুতাও আপনি রেডিমেড কিনে নিতে পারেন।
রং- মোমবাতি সুন্দর দেখানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের রং ব্যবহার করা হয়। এজন্য আলাদাভাবে মোমের রং কিনতে পাওয়া যায় যা দেখতে পাউডারের মত গুঁড়ো।
মোমবাতি তৈরির কিছু টিপসঃ
এই বিজনেস শুরু করতে চাইলে যাদের কাছ থেকে মেশিন ও উপকরণ কিনবেন তাদের কাছ থেকে ২/৩ দিন ট্রেনিং নিলেই আপনি পারবেন। এই রকম ছোট ছোট শিল্পের কিছু বই বাজারে পাওয়া যায়, সেগুলো অনেক সাহায্য করবে আপনাকে। তাছাড়া ইন্টারনেট/ ইউটিউব ভিডিও দেখেও শিখে নিতে পারেন। তবে উদ্যোগ গ্রহণ করাটাই বড় কাজ, শুরু করলেই কিছু একটা হবেই। তারপরও এখানে কিছু ধারনা দেয়া হল-
সাধারণ মোম আর রঙ্গিন বা কারুমোম হোক মোম তৈরির জন্য প্রথমেই ডাইসের দুটি অংশ আলাদা করতে হবে। এরপর একটি কাপড়ে তেল নিয়ে ডাইসের ভেতরে থাকা খাঁজগুলো ভালোভাবে মুছে নিতে হবে। ছাঁচের মধ্যে সলতে রাখা আছে। সলতেগুলো ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত টান টান করে বেঁধে দিতে হবে। এরপর ছাঁচের দুটি অংশ একসঙ্গে আটকে দিতে হবে।
কড়াই গরম হলে তার মধ্যে প্যারাফিন দিতে হবে। তা পুরোপুরি গলে যাওয়ার আগেই কড়াইয়ে মোট প্যারাফিনের দশ ভাগের এক ভাগ স্টিয়ারিক এসিড মেশাতে হবে।
প্যারাফিন গলে যাওয়ার পর বেশিক্ষণ চুলায় রাখা যাবে না। গলে যাওয়া প্যারাফিন বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে পারে। গলা মোম আস্তে আস্তে ডাইসের খাঁজগুলোতে ঢালতে হবে। খাঁজটি পুরোপুরি না ভরা পর্যন্ত ঢালতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে, মোম ঢালার সময় খাঁজের ভেতরে যেন কোনো ফাঁকা থেকে না যায়। মোমগুলো ঠাণ্ডা হলে ছাঁচের দুটি অংশ আলাদা করে মোমগুলো বের করে আনতে হবে। এবার মোমের সলতের বাড়তি অংশগুলো সাইজমতো কাটতে হবে। মোমবাতির নিচের অংশের তলাটি সমান করে কাটতে হবে। বিভিন্ন আকৃতির নকশা করা মোম তৈরির জন্য সে অনুযায়ী ছাঁচ তৈরি করতে হয়। মনে রাখবেন ডাইস ভালো হলে, তৈরি মোমও সুন্দর হবে।
ইউটিউবে বিভিন্ন মোমবাতি তৈরির ভিডিও টিউটোরিয়াল পাবেন, সেগুলো থেকেও কিছু ধারনা পাবেন, ভিডিও দেখে ভাল করে শিখে নিতে পারবেন সহজে।
সাবধানতাঃ
মোমবাতি তৈরি করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে-
১। স্টিয়ারিক এসিড মোমের সাথে মেশানোর সময় সাবধান থাকতে হবে এবং সঠিক পরিমান দিতে হবে।
২। মোমে যদি আগুন ধরে যায় তবে সঙ্গে সঙ্গে চুলা নিভিয়ে ঢাকনা দিয়ে কড়াই ঢেকে দিতে হবে।
৩। চুলার উপর কড়াই থাকা অবস্থায় রং মেশানো যাবে না, চুলা থেকে নামিয়ে রং মেশাতে হবে।
৪। মোম তৈরির কাচামাল থেকে ও তৈরির সময় শিশুদের নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।
৫। চুলায় মোম গলতে দিয়ে অন্য কাজ করা ঠিক নয় কারণ এত দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
৬। গলা মোম যেন কাপড়ে ও শরীরে না লাগে, সেদিকে খেয়াল রেখে সাবধানে কাজ করবেন।
বাজারজাতঃ
তৈরি যেকোনো ধরনের মোমবাতি নিজেরাই বিক্রয় ও বাজারজাত করা যায়। নিজেরা বিভিন্ন দোকানে তা সরবরাহ করলে মুনাফাও বেশি পাওয়া যায়। আবার ঘরে বসে, দোকান বা শো-রুম করে মোমবাতি বিক্রয় করা যায় তবে এতে লাভ একটু কম হতে পারে। মোমবাতি প্যাকেট করে বাজারজাত করতে পারলে ভালো । প্যাকেট আকর্ষণীয় হলে পণ্যের চাহিদাও বেড়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আবার মোমবাতির গুনাগুণ যাতে নষ্ট হয় না, প্যাকেট তৈরির সময় এদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। প্যাকেটের সাথে যদি লেবেল ব্যবহার করা যায় তবে আরও ভালো হয়। কারণ বাজারে যেখানে নানা ধরনের মোম আছে সেখানে এত মোমের মাঝে নিজের মোমের প্রচার হবে। তবে বাজারজাত করার সময় মনে রাখা উচিত যে মোমবাতি খুবই ভারী ও ভঙ্গুর বস্তু তাই সাবধানে দোকানে নিয়ে যেতে হবে।
ঢাকায় বিভিন্ন কোম্পানি মোমবাতি তৈরির মেশিন বিক্রয় করে। এখানে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা দেয়া হলো-
১. গোল্ডেন ভিলেজ ইঞ্জিনিয়ারিং, বাকের বন্ধু সেন্টার, ৩২৫ সাউথ যাত্রাবাড়ী (২য় তলা), ঢাকা; ফোন : ৭৫৪৯৩০৯, ০১৭১১৩৩৮৭২০, ০১৯১৩-৪০২২০০। ওয়েবঃ http://bshqprince.com/ (এখানে আরও অন্যান্য মেশিনও আছে)
কাজটি পরিবারের সদস্যরা মিলেই অল্প টাকা দিয়েই শুরু করা যায় । বেকার নারী বা পুরুষ নিজের কর্মসংস্থানের জন্য মোমবাতি তৈরির ব্যবসা শুরু করতে পারেন, এখানে মোমবাতি তৈরির কলাকৌশল, উপকরণ, কাঁচামাল, বাজারজাত করণ, আয়-ব্যয় এর কিছু টিপস নিচে তুলে ধরা হল-
সবার আগে প্রশিক্ষণ
মোমবাতি তৈরির কাজটা খুব কঠিন নয়। তবে কারিগরি জ্ঞান না থাকলে তৈরি করা যাবে না। এর জন্য নিতে হবে প্রশিক্ষণ। সবচেয়ে ভালো হয় মোমবাতি তৈরির কোনো প্রতিষ্ঠানে একজন কারিগরের অধীনে ১/২ দিন কাজ করতে পারলে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও মোমবাতি তৈরির কাজ শেখা যায়। যাদের কাছে ডাইচ ও অন্যান্য উপকরণ কিনবেন তাদের কাছেও প্রশিক্ষন নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। একেবারে কিছু না জেনে কোন কিছুই করা ঠিক হবেনা।
মোমবাতি কিভাবে তৈরি করতে হয়, তার কিছু ধারনা নিচে দেয়া হল-
মোমবাতি দুই ধরনের হয়ে থাকে- ১। আলোর জন্য ব্যবহার্য সাধারণ মোমবাতি, ২। ঘর-সাজানো, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহার্য রঙ্গিন কারুমোম।
মোমবাতি বানাতে কাঁচামাল এবং স্থায়ী উপকরণ ও যন্ত্রপাতি
কাঁচামালঃ
কাঁচামালের নাম এগুলো কোথায় পাওয়া যাবে :-
১. সাদা মোম বা প্যারাফিন
২. স্টিয়ারিক অ্যাসিড
৩. সুতি সুতা
৪. প্রয়োজনীয় রং
৫. পেট্রোলিয়াম জেলি বা সাধারণ তেল,
৬. প্যাকেট কাগজ কিনে নিজেরা তৈরি করে নেওয়া যায়
৭. লেবেল (যদি লাগে) প্রেস থেকে ছাপাতে হবে ।
৮. ছাঁচের জন্য মোটা কাগজ বা মোটা কাগজের বাক্স।
৯. আঠা
উপরের মালামাল গুলো স্থানীয় কেমিক্যালস এর দোকানে, হার্ডওয়্যার, মুদি, ব্লক-বুটিক এর দোকানে পাওয়া যাবে। তবে যেখান থেকে মোমের মূল কাঁচামাল (সাদা মোম বা প্যারাফিন এবং স্টিয়ারিক অ্যাসিড) অথবা ডাইস বা মেশিন কিনবেন তারা এ ব্যাপারে ভালো পরামর্শ দিতে পারে। তারা এ ব্যাপারে অনেক সহজোগিতা করবেন। তবে মনে রাখবেন যেকোন জিনিস তৈরি করার জন্য দরকারি কাঁচামাল যোগাড় করা ও কেনার উপর ব্যবসার লাভ-ক্ষতি নির্ভর করে।
স্থায়ী উপকরণ ও যন্ত্রপাতিঃ
মোমবাতির ডাইস/ছাচ, কড়াই, পাত্র, ছুরি, কাঁচি, চামচ, মগ, বালতি, তুলি, স্টোভ ইত্যাদি।
এখন আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই এসব কাঁচামাল এবং উপকরণ আসলে কি জিনিস:
মোমবাতির ডাইস/ছাচঃ মোম তৈরির জন্য প্রথমেই লাগবে ডাইস বা ছাঁচ। বিশেষ এ ডাইসের ভেতরে মোমবাতি আকৃতির কতগুলো খাঁজ থাকে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের রেডিমেড ছাঁচ পাওয়া যায় যাদের দাম অনেক বেশী। তবে ছাঁচ নিজেরাও তৈরি করে নিতে পারেন। যেমন: টিন, প্লাস্টিক বা লোহা দিয়ে লেদ মেশিনে নিজেদের পছন্দমত তৈরি করা যায়।
সাদা মোম বা প্যারাফিনঃ এটি এক ধরনের খনিজ মোম যা খনি থেকে পাওয়া যায়। সাদা রঙের মোমের কোনো গন্ধ ও স্বাদ নেই ও তা অল্প তাপে সহজেই গলে যায়। তাপে প্যারাফিন গলে যায়, তবে যেটি ৫৮° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দ্রবিভূত হয় তাই মোমবাতি তৈরীর জন্য সবচেয়ে উপযোগী। প্যারাফিন শক্ত, কম শক্ত ও নরম পাওয়া যায়, মোমবাতি তৈরি করার জন্য শক্ত প্যারাফিন ভালো।
স্টিয়ারিক অ্যাসিডঃ স্টিয়ারিক অ্যাসিড পশুর চর্বি বা তৈল থেকে অথবা পাম অয়েল থেকে তৈরি এক ধরনের অ্যাসিড যা দেখতে কঠিন মোমের মত। এটিও অল্প তাপে গলে যায়। প্যারাফিনের সাথে স্টিয়ারিক অ্যাসিড পরিমাণমতো মেশালে তৈরি মোম উন্নতমানের হয়। এর ফলে মোম বাতি শক্ত হয়, মোম তাড়াতাড়ি গলে যায় না ও মোমবাতি বেশি সময় ধরে জ্বলে। তাই প্যারাফিন ও স্টিয়ারিক অ্যাসিড পরিমাণমতো মেশাতে হবে। কারণ তা কম বা বেশি হলে মোমবাতির মান ভালো হবে না।
সলতেঃ মোমবাতি তৈরির জন্য ঢিলাভাবে পাকানো কার্পাস সুতা প্রয়োজন। মোমের সাইজ অনুযায়ী এই সুতা চিকন ও মোটা হবে। মোটা ব্যাসের মোমের জন্য মোটা পলতের সুতা এবং চিকন ব্যাসের মোমের জন্য চিকন পরতের সুতা নিতে হবে। সলতের সুতা অবশ্যই সুতি হতে হবে। আর গলা মোমে সুতা চুবিয়ে মোমের প্রলেপ দিতে হয়। সলতের সুতাও আপনি রেডিমেড কিনে নিতে পারেন।
রং- মোমবাতি সুন্দর দেখানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের রং ব্যবহার করা হয়। এজন্য আলাদাভাবে মোমের রং কিনতে পাওয়া যায় যা দেখতে পাউডারের মত গুঁড়ো।
মোমবাতি তৈরির কিছু টিপসঃ
এই বিজনেস শুরু করতে চাইলে যাদের কাছ থেকে মেশিন ও উপকরণ কিনবেন তাদের কাছ থেকে ২/৩ দিন ট্রেনিং নিলেই আপনি পারবেন। এই রকম ছোট ছোট শিল্পের কিছু বই বাজারে পাওয়া যায়, সেগুলো অনেক সাহায্য করবে আপনাকে। তাছাড়া ইন্টারনেট/ ইউটিউব ভিডিও দেখেও শিখে নিতে পারেন। তবে উদ্যোগ গ্রহণ করাটাই বড় কাজ, শুরু করলেই কিছু একটা হবেই। তারপরও এখানে কিছু ধারনা দেয়া হল-
সাধারণ মোম আর রঙ্গিন বা কারুমোম হোক মোম তৈরির জন্য প্রথমেই ডাইসের দুটি অংশ আলাদা করতে হবে। এরপর একটি কাপড়ে তেল নিয়ে ডাইসের ভেতরে থাকা খাঁজগুলো ভালোভাবে মুছে নিতে হবে। ছাঁচের মধ্যে সলতে রাখা আছে। সলতেগুলো ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত টান টান করে বেঁধে দিতে হবে। এরপর ছাঁচের দুটি অংশ একসঙ্গে আটকে দিতে হবে।
কড়াই গরম হলে তার মধ্যে প্যারাফিন দিতে হবে। তা পুরোপুরি গলে যাওয়ার আগেই কড়াইয়ে মোট প্যারাফিনের দশ ভাগের এক ভাগ স্টিয়ারিক এসিড মেশাতে হবে।
প্যারাফিন গলে যাওয়ার পর বেশিক্ষণ চুলায় রাখা যাবে না। গলে যাওয়া প্যারাফিন বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে পারে। গলা মোম আস্তে আস্তে ডাইসের খাঁজগুলোতে ঢালতে হবে। খাঁজটি পুরোপুরি না ভরা পর্যন্ত ঢালতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে, মোম ঢালার সময় খাঁজের ভেতরে যেন কোনো ফাঁকা থেকে না যায়। মোমগুলো ঠাণ্ডা হলে ছাঁচের দুটি অংশ আলাদা করে মোমগুলো বের করে আনতে হবে। এবার মোমের সলতের বাড়তি অংশগুলো সাইজমতো কাটতে হবে। মোমবাতির নিচের অংশের তলাটি সমান করে কাটতে হবে। বিভিন্ন আকৃতির নকশা করা মোম তৈরির জন্য সে অনুযায়ী ছাঁচ তৈরি করতে হয়। মনে রাখবেন ডাইস ভালো হলে, তৈরি মোমও সুন্দর হবে।
ইউটিউবে বিভিন্ন মোমবাতি তৈরির ভিডিও টিউটোরিয়াল পাবেন, সেগুলো থেকেও কিছু ধারনা পাবেন, ভিডিও দেখে ভাল করে শিখে নিতে পারবেন সহজে।
সাবধানতাঃ
মোমবাতি তৈরি করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে-
১। স্টিয়ারিক এসিড মোমের সাথে মেশানোর সময় সাবধান থাকতে হবে এবং সঠিক পরিমান দিতে হবে।
২। মোমে যদি আগুন ধরে যায় তবে সঙ্গে সঙ্গে চুলা নিভিয়ে ঢাকনা দিয়ে কড়াই ঢেকে দিতে হবে।
৩। চুলার উপর কড়াই থাকা অবস্থায় রং মেশানো যাবে না, চুলা থেকে নামিয়ে রং মেশাতে হবে।
৪। মোম তৈরির কাচামাল থেকে ও তৈরির সময় শিশুদের নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।
৫। চুলায় মোম গলতে দিয়ে অন্য কাজ করা ঠিক নয় কারণ এত দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
৬। গলা মোম যেন কাপড়ে ও শরীরে না লাগে, সেদিকে খেয়াল রেখে সাবধানে কাজ করবেন।
বাজারজাতঃ
তৈরি যেকোনো ধরনের মোমবাতি নিজেরাই বিক্রয় ও বাজারজাত করা যায়। নিজেরা বিভিন্ন দোকানে তা সরবরাহ করলে মুনাফাও বেশি পাওয়া যায়। আবার ঘরে বসে, দোকান বা শো-রুম করে মোমবাতি বিক্রয় করা যায় তবে এতে লাভ একটু কম হতে পারে। মোমবাতি প্যাকেট করে বাজারজাত করতে পারলে ভালো । প্যাকেট আকর্ষণীয় হলে পণ্যের চাহিদাও বেড়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আবার মোমবাতির গুনাগুণ যাতে নষ্ট হয় না, প্যাকেট তৈরির সময় এদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। প্যাকেটের সাথে যদি লেবেল ব্যবহার করা যায় তবে আরও ভালো হয়। কারণ বাজারে যেখানে নানা ধরনের মোম আছে সেখানে এত মোমের মাঝে নিজের মোমের প্রচার হবে। তবে বাজারজাত করার সময় মনে রাখা উচিত যে মোমবাতি খুবই ভারী ও ভঙ্গুর বস্তু তাই সাবধানে দোকানে নিয়ে যেতে হবে।
ঢাকায় বিভিন্ন কোম্পানি মোমবাতি তৈরির মেশিন বিক্রয় করে। এখানে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা দেয়া হলো-
১. গোল্ডেন ভিলেজ ইঞ্জিনিয়ারিং, বাকের বন্ধু সেন্টার, ৩২৫ সাউথ যাত্রাবাড়ী (২য় তলা), ঢাকা; ফোন : ৭৫৪৯৩০৯, ০১৭১১৩৩৮৭২০, ০১৯১৩-৪০২২০০। ওয়েবঃ http://bshqprince.com/ (এখানে আরও অন্যান্য মেশিনও আছে)
No comments:
Post a Comment